এসএম .দেলোয়ার : আজকে সত্যের সন্ধানে আমরা দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা BBD সংবাদ সংস্থা জেলা গোপাল গঞ্জ।সম্পাদকীয় পাতায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি” ভাবনায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি।আমাদের বাংলাদেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এটি যেন বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বিশাল বড় সমস্যা। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে নিজেদের স্বার্থে।
এর ফলে নিম্নআয় সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। সাধারণত কোনো পণ্যের অত্যাধিক মূল্য বেড়ে যাওয়াকেই বলা হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বর্তমানে পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে আমাদের দেশের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মুদি দোকানগুলোতে যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যায়, গত কয়েক মাসে আটা-ময়দাসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা করে বেড়েছে।
এ ছাড়াও শিশুখাদ্যসহ মাছ-মুরগির খাদ্য ইত্যাদির মূল্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে উৎপন্ন পণ্যে। বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে, বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে? এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে জনসাধারণের জীবন হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ। উৎপাদক পর্যায়ে কৃষক যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে, এর চেয়ে ৪-৫গুণ বেশি মূল্যে ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা এর দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করছে পণ্যের পচনশীল আর জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ওপর। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না মানুষের আয়। ফলে নিম্নআয়সম্পন্ন মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে উঠছে। স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী এবং পরিবার ছেড়ে দূরে থাকা শিক্ষার্থীদের জীবনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে
। যেমন- বর্তমানে কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমাগত বাড়ছে বইয়ের দামও। অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে বলা হয়, ‘বছরে ২% থেকে ৪% এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির হার থাকলে, সেটা দেশের জন্য শুভলক্ষণ।’ কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির হার প্রায় ৮%।
ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না কিছু সুবিধাবাদী লোকের কারণে।এটি যেন বাংলাদেশের মত দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বিশাল বড় সমস্যা—যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলেগেছে বলে ধারনা করছে অনেকে।দ্রব্যমূল্য একবার বেড়ে গেলে তা আর নিয়ন্ত্রণে আসে না। এটা নিয়ে সরকারি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করলেও কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম :-
বর্তমানে, দেশি পেঁয়াজ ৬০-৮০,আলু ৪৫-৬০, চিনি ১৩০-১৪০, ছোলা ৮০-৮৫, বেগুন ৪০-৬০, আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫-৮৫, দেশি রসুন ১৪০-১৬০, দেশি শুকনা মরিচ ৩৯০-৪২০, ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২১০, খাসির মাংস ১ হাজার-১ হাজার ১০০, গরুর গোশত ৭৫০-৭৮০ টাকা, ব্রয়লার ডিম ৪৭-৫০ টাকা হালি, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭৫-১৮৫ ও সরিষার তেল ৩৬০, দেশি আদা ৩২০-৩৪০, আয়োডিনযুক্ত লবণ ৩৮-৪২, মসুর ডাল ১৩০-১৩৫ টাকা।
আজকে আসামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর ভিত্তি করে সমাজে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করছি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও প্রতিকার:
১. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এক মাত্র প্রতিকার অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, কালোবাজারি, দুর্নীতি শক্ত হাতে দমন করতে হবে।
২.মোবাইল কোডের সাহায্যে বাজারে অনিয়ম স্থিতিশীল রাখতে হবে। এবং অনিয়ম রুখতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩.কৃষিপ্রধান দেশে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষিকর্মকর্তা সহ সরকারের সসহযোগিতার মনোভাব স্থাপন করা।
৪.কৃষিপণ্য সঠিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মধ্যসত্বভোগী দালালদের দূরীকরণ।
৫.টিসিবির পণ্য যেন দরিদ্ররা পায় সেদিকে প্রশাসনের কড়া নজর রাখতে হবে।
৬.দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের হাট বাজারে নায্য মুল্যের দোকান প্রতিষ্ঠা করার দরকার।
৭.অসাধু ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট, কালোবাজারি, দুর্নীতিবাজদের জরিমানা করে সেই অথ সত্ ব্যাবসায়ীদের পুরুস্কারের ঘোষনা দিতে হবে।
৮.সর্বপরি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে কাজ করতে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাজারগুলোতে সরকারের প্রশাসন দ্বারা অনিয়ম রুখতে পারলেই বাজারদাম স্থিতিশীল হতে বাধ্য। পাশাপাশি জনগণ ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব পোষণের মাধ্যমে এই ঘাতক ব্যধি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে আমি মনে করি।
Leave a Reply