শনিবার, ২৭ মে ২০২৩, ০৫:৩৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
গাজীপুরে বাবার কবরের পাশে সমাহিত হলেন চিত্রনায়ক ফারুক গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মোটরসাইকেল খাদে পড়ে এক যুবক নিহত On the occasion of auspicious marriage we seek prayers from honorable Prime Minister Sheikh Hasina and everyone from home and abroad. আজ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ২২তম রাষ্ট্রপতি মো:সাহাবুদ্দিনের শ্রদ্ধা নিবেদন দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে জনগণ-নাছিম। এমপি ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খান সহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ২ জন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের নিজের ভাষায় তাঁর জীবন কথা
বাঙালী নারীদের কাছে অদম্য সাহসী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা

বাঙালী নারীদের কাছে অদম্য সাহসী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা

এসএম,দেলোয়ার : বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এর স্ত্রী  বাঙালী নারীদের কাছে অদম্য সাহসী এক নারীর প্রতীক  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ।তিনি ১৯৩০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেনু। তার পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম।। মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা আর পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারানোর পর রেনুর দেখা শুনা করতেন দাদা শেখ কাশেম ।

তিনি তার স্বামী শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন ছিলেন। শেখ মুজিবের বয়স যখন ১৩ বেগম ফজিলাতুন্নেসার বয়স তখন মাত্র তিন, তখন পরিবারের বড়রা তাদের বিয়ে ঠিক করেন।১৯৩৮ সালে বিয়ে হবার সময় রেনুর বয়স ছিল ৮ বছর ও শেখ মুজিবের ১৮ বছর পরে এই দম্পতির দুই কন্যা ও তিন ছেলে হয়। তারা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং শেখ কামাল,শেখ, জামাল ও শেখ রাসেল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের সফলতার পিছনে ছিল অদম্য সাহসী এক নারীর প্রতীক  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এর আত্মত্যাগের ইতিহাস।রাজনীতিবিদ না হয়েও দেশের দুঃসময়ে জনগণকে আগলে রেখেছেন নিজের মেধাও বিচক্ষণতা দিয়ে।তাই তো বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে স্ত্রীর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সে (রেণু) তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।’ প্রিয়তমার জন্য কতটা ভালোবাসা হলে হৃদয়ে এমন রক্ত ক্ষরণ হয় তা অনুমান করা অসম্ভব।

জাতির পিতার ‘রেণু’ হলেন বাংলার মমতাময়ী নারী বেগম শেখ ফজিল্লাতুনেছা মুজিব । যিনি প্রজ্ঞা, ধৈর্য্য, সাহসিকতা, মায়া মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে পালন করেছেন নারী জীবনের সকল দায়িত্ব।সংসার চালানোর পাশাপাশি রাজনীতিতে দেশের দুঃসময়ে জনগণকে আগলে রেখেছেন নিজের মেধাও বিচক্ষণতা দিয়ে । যার জন্য সকলের কাছে তিনি বঙ্গমাতা হিসাবে সমাদৃত।তখনকার সময়ে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ের প্রচলন থাকলেও; দাদা একদম শিশুকালে রেনুকে শেখ মুজিবের কাছে বিয়ে দেন বিশেষ কারণে। সে কারণটা পরিষ্কার হয় বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে , “আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বয়স বার তের হতে পারে। রেণুর বাবা মারা যাবার পরে ওর দাদা আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, ‘তোমার বড় ছেলের সাথে আমার এক নাতনীর বিবাহ দিতে হবে।

কারণ, আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে লিখে দিয়ে যাব।’ রেণুর দাদা আমার আব্বার চাচা। মুরব্বির হুকুম মানার জন্যই রেণুর সাথে আমার বিবাহ রেজিস্ট্রি করে ফেলা হল। আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স তখন বোধহয় তিন বছর হবে।পরে ১৯৩৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯ বছর বয়সে এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯ বছর বয়সে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় দুজনের।রেনুর মায়ের মৃত্যুর দু বছর পর দাদা ও মারা যায় বলে বঙ্গবন্ধুর মা সায়েরা খাতুন নিজের সন্তানদের সাথে বড় করেন রেনুকে। তৈরি করেন আর্দশ নারী হিসাবে।বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা হয়ে ছিলেন বলে সংসার, রাজনৈতিক সকল বিষয়ে আলাপ করতেন স্ত্রী রেনুর সাথে। রেনুও তার সর্বস্ব দেশপ্রেমী স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন দেশের কাজের জন্য।

বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন নিয়ে তিনি থাকতেন উদ্বিগ্ন। একবার একটানা ১৭/১৮ মাস জেলে থাকায় বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য বেশ খারাপ হয়ে যায়। যা দেখে বেগম মুজিব কষ্ট পেয়ে স্বামীকে বলেন, ‘জেলে থাক আপত্তি নেই। তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখ। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বোঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন… তোমার কিছু হলে বাঁচব কি করে?’

বেগম মুজিবের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামালে নেয়ার মতো বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য্য ও সাহস দিয়ে মোকাবেলা করার শক্তি ছিল ছোট বেলা থেকে । আর নিজের এ গুন দিয়ে শেখ হাসিনা, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেলকে মানুষ করেছেন। শিখিয়েছেন দেশের কাছে ব্যক্তি জীবনের চাওয়া পাওয়া সব কিছু তুচ্ছ।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পড়ালেখা খুব বেশি করেননি।তবে স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। গান ভালোবাসতেন। অবসরে বই পড়তেন। নিজের মুক্তচিন্তা দিয়ে রাজনীতিকে অনুধাবন করতেন বলে স্বামীর প্রতিটি অর্জনের পেছনে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। মাসের পর মাস জেলবন্দী বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে পরিবার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা,শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশুনা সহ রাজনৈতিক সংকট সামলাতেন তিনি সুনিপুণভাবে। ১৯৭১যখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী। ফিরবে কিনা তা অনিশ্চিত। সে অবস্থায়ও নিজের দুই ছেলেকে নির্ভয়ে পাঠিয়েছেন যুদ্ধ করতে।

দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে সদা প্রস্তুত এ নারী সন্তানদের নিয়ে সহ্য করেছেন পাকিস্তানিদের নিপীড়ন।এ মহীয়সী নারীর জন্ম ও মৃত্যু হয় একই মাসে । ১৯৩০ সালের ৮ আগষ্ট জন্ম আর মৃত্যু ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫।সে কারনে বাংলাদেশ ও বাংলার জনগণ প্রতিনিয়ত অশ্রুসিক্ত নয়নে সশ্রদ্ধে স্মরণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার  স্ত্রী  বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছাকে। কারন বাঙালী নারীদের কাছে তিনি অদম্য সাহসী এক নারীর প্রতীক।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2020
Desing & Developed BY BBDBARTA