দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা : মাদারীপুর সদর উপজেলার পুরাতন কাজীরটেক ফেরিঘাট এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদে ইম্প্যাক্ট জীবন তরী ভাসমান হাসপাতালটি সাধারণ রোগীদের মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। লঞ্চের মতো দেখতে ভাসমান হাসপাতালটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে নোঙর করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন এখানে অনেক রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে।
হাজার টাকা ফি দিয়ে ডাক্তার দেখানোর মতো আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। তাই এখানে মাত্র ৫০ টাকা দিয়েই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারছি। এটা আমাদের জন্য খুব আনন্দের বিষয়।’কথাগুলো বলছিলেন ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মাদারীপুর শহরের থানতলী এলাকার লাবনী বেগম।
ভাসমান হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে হাজার হাজার মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে জীবন তরী ভাসমান হাসপাতালটি। মাদারীপুরে প্রায় আড়াই মাস ধরে এই সেবা দিয়ে আসছে। আগামী জুন মাস পর্যন্ত এখানে অবস্থান করে রোগীদের সেবা দেবে তারা। এখানে নাক-কান গলা ও চোখের অপারশেন করানো হয়। এছাড়াও জন্মগত ঠোঁটকাটা, হাত-পা বাঁকাসহ নানা ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়।
ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এই চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখানে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৪ জন নার্সসহ মোট ৩২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখছেন চিকিৎসকরা। মহিষেরচর এলাকা থেকে আসা রোগী কামাল হোসেন বলেন, আমি এখানে আরও একবার এসেছিলাম। এখন আবার এসেছি। মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে চোখেরইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের চিকিৎসক মোফাজ্জেল হোসাইন বলেন, এই ভাসমান হাসপাতালে তিনটি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আমি নাক, কান ও গলা দেখি। অন্য আরও দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। তারাও নানা জটিল বিষয়ের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এখানে অপারেশনেরও ব্যবস্থা আছে। অল্প টাকায় এখানে অপারেশনও করা হয়।আরেক চিকিৎসক রিয়াদুল ইসলাম বলেন, জন্মগত হাত-পা বাঁকা রোগীদের চিকিৎসা এখানে করানো হয়। এখানে অল্প খরচে অপারশেন হয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন জেলার নদীর কাছাকাছি মানুষজন যাতে স্বাস্থ্যসেবা পান, সেটি নিশ্চিত করা।
চিকিৎসক সুজন আলী বলেন, চোখের সমস্যা নিয়ে এখানে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। অল্প টাকায় এখানে চোখের অপারেশনও করানো হচ্ছে। ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশিরভাগই হতদরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই তাদের কথা চিন্তা করে গত ২৫ বছর ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। আমরা প্রতিটি এলাকায় দুই থেকে ৬ মাস অবস্থান করে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকি। এখানে নানা ধরনের রোগের চিকিৎসা পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।
মাদারীপুরের উন্নয়ন সংস্থা দেশগ্রামের নির্বাহী পরিচালক এবিএম বজলুর রহমান খান বলেন, মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে সাধারণ ও গরিব রোগীরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাচ্ছেন, এটা অবশ্যই ভালো দিক।চিকিৎসা পেয়ে খুশি স্থানীয় অনেক সাধারণ রোগী।
Leave a Reply