বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন বিজয় মাসে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি দু’র্ধ’র্ষ বীর বিক্রম হেমায়েত উদ্দিনকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নাম করনের সংক্ষিত ইতিহাস জানুন গোপালগঞ্জ-৩ আসনে যাচাই-বাছাইয়ে শেখ হাসিনাসহ বৈধ ৫জন বাতিল ৩ প্রার্থী গোপালগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল -২ জন বৈধ-৬ প্রার্থী গোপালগঞ্জ-০১ আসনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল-১ জন বৈধ-৫ প্রার্থী রাজৈর উপজেলায় মানহানির মামলায় আবদুস সালাম খন্দকারের এক বছরের কারাদণ্ড গোপালগঞ্জ জেলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩টি আসনে ২২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল ফরিদপুরের সালথায় বিদেশি মদসহ এক নারী গ্রেফতার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জের তিনটি আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন যারা
মাদারীপুরে অবৈধ পথে ইতালি যাত্রা ৩১ লাখ টাকা দিয়েও সন্ধান নেই শাওনের

মাদারীপুরে অবৈধ পথে ইতালি যাত্রা ৩১ লাখ টাকা দিয়েও সন্ধান নেই শাওনের

দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা;মাব্দারীপুরে দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে ইতালি যেতে চেয়েছিলেন মাদারীপুরের শাওন হাওলাদার। কয়েক ধাপে দালালদের ৩১ লাখ টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু যেতে পারেননি স্বপ্নের দেশ ইতালিতে। উল্টো গত একমাস খোঁজ নেই শাওনের। একদিকে মাথায় পাহাড়সমান দেনা, অন্যদিকে শাওনের সন্ধান না পাওয়ায় দিশেহারা পুরো পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের হাজির হাওলা গ্রামের মোস্তফা হাওলাদার ও শিরিন আক্তারের ছোট ছেলে শাওন হাওলাদার। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইতালি যাওয়ার জন্য ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন একই উপজেলার ছয়না গ্রামের দালাল শাহ আলম মৃধার সঙ্গে। তার সঙ্গে চুক্তি হয় এ টাকায় তাকে ইতালি পৌঁছে দেবেন। পথে যত ঝামেলা হবে তিনি দেখবেন। পরে শাওন হাওলাদার লিবিয়ার পৌঁছানোর কয়েকদিন পর দালালরা তার পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলেন, শাওনকে ‘গেম ঘরে’ রাখা হয়েছে। ‘গেম ঘর’ থেকে তাকে ছাড়াতে হলে সাত লাখ ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। তাদের কথামতো ব্যাংকের মাধ্যমে সেই টাকা দেওয়া হয়।

এরপর শাওনকে কয়েকবার লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে বেচাকেনা করা হয়। একাধিকবার পুলিশের হাতে বন্দিও হতে হয়েছে শাওনকে। চলে অমানবিক নির্যাতন। এরপর আবারও শাওনের পরিবারের কাছে ১১ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ফোন দিয়ে পরিবারকে জানানো হয়, যেভাবেই হোক টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে।

পরে জমিজমা বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এভাবে কয়েক দফায় ৩১ লাখ টাকা দিয়েছেন দালালরা। এক মাস আগে শাওন তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবার। এ ঘটনায় গত ১৬ অক্টোবর শাওনের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলায় মাদারীপুর সদর উপজেলার ছয়না গ্রামের শাহ আলম মৃধা (৫০) ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৪৫), তাদের ছেলে তুহিন মৃধা (২৮) ও তুষার মৃধা (২৫) এবং হাজীর হাওলা গ্রামের আবু কালাম তালুকদারকে (৪৫) আসামি করা হয়।

নিখোঁজ শাওনের বড় ভাই শিমুল হাওলাদার বলেন, ‘ছয়না গ্রামের শাহ আলম মৃধার সঙ্গে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার চুক্তিতে আমার ভাই শাওনকে ইতালি পাঠাই। তারা বলেন, এক মাসের মধ্যেই সে ইতালি পৌঁছে যাবে। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময় হলেও শাওন ইতালি যেতে পারেনি। বরং সে গত এক মাস ধরে নিখোঁজ আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমরা তাদের (দালাল) ৩১ লাখ টাকা দিয়েছি। কয়েক মাস আগে লিবিয়া থেকে ফোন আসে। পরে তাদের কথামতো ১১ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা যাই। সেখানে তারা আমাকে প্রায় চার ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরায়। এরপর চোখ ও হাত বেঁধে নবীনগরের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন লোক ওই টাকা নিয়ে আবার আমাকে রাস্তায় রেখে চলে যায়।’

‘তাদের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড মাদারীপুর শাখা থেকে গতবছরের ২৬ মে চার লাখ, ১৪ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মাদারীপুর শাখা থেকে এক লাখ ৩০ হাজার। এর কিছুদিন পর একই নম্বরে আবার দুই লাখ টাকা পাঠানো হয়। এভাবে আমরা তাদের ৩১ লাখ টাকা দিয়েছি। এতকিছুর পরও আমার ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই’, বলেন শিমুল হাওলাদার।

শাওনের মা শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো সন্ধান নেই। ও বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কিছুই জানি না। তাই বাধ্য হয়ে মামলা করেছি।দালাল শাহ আলম মৃধা আমাদের একেবারের শেষ করো দিলো। আমি ওর শাস্তি চাই।’

নিখোঁজ শাওনের স্ত্রী ইতি আক্তার বলেন, ‘লিবিয়ায় মাফিয়ারা আমার স্বামীকে শুধু বেচাকেনা করেছে। নির্মমভাবে তাকে মারধরও করতো। সপ্তাহে একদিন করে ফোন দিয়ে দুই এক মিনিট কথা বলতে দিতো। তাই আমরা আমাদের সব কিছু বিক্রি করে, ধারদেনাকরে, লোন নিয়ে এ পর্যন্ত ৩১ লাখের বেশি টাকা তাদের দিয়েছি। এরপরও শাওন ইতালি যেতে পারেনি। উল্টো তার গত একমাস তার কোনো সন্ধান নেই।’

প্রতিবেশী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বহু টাকা তারা দালালদের দিয়েছে। টাকা দিতে দিতে তারা এখন নিঃস্ব। জমি-জমাও বিক্রি করেছে। বর্তমানে শাওনের কোনো খোঁজও নেই। আসলে ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।’

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি থানায় নতুন জয়েন করেছি। তাই ব্যাপারটা আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে পরে জানাতে পারবো।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2020
Desing & Developed BY BBDBARTA