দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা : ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচলে চালকদের প্রতিযোগিতা, ওভারটেকিং, গাছের গুঁড়ি, ধানের খড়কুটো, অবৈধ স্থাপনা, অটোভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন, ভটভটি চলাচলের কারণে গোপালগঞ্জে একের পর এক ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
জেলায় গত দেড় মাসে ৩১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৫ জন। আহত হয়েছে শতাধিক। এর মধ্যে কাশিয়ানীতেই ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৮ জন। আর আহত হয়েছে অনেকেই। এ ছাড়া মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় নিহত হয়েছে আরও অন্তত ৭ জন।
জানা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের অংশে রয়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময় দেখা যাবে দুই পাশেই পুরো সড়কে বা কোথাও কোথাও খানিকটা অংশজুড়ে ধানের মৌসুমে ধান মাড়াই, ধানের খড় ও ধান শুকানোর কাজ করে থাকে অসংখ্য মানুষ। এমনি মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে গাছের গুঁড়ি, ইট, বালু রাখা হচ্ছে।
যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই মহাসড়ক ব্যবহার করে থাকে গোপালগঞ্জের মানুষ। প্রশাসন এর আগে একাধিকবার এই সড়কে অবৈধ যানচলাচল বন্ধ, গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও আবার একই অবস্থার সৃষ্টি করে এলাকার লোকজন। মাঝে মাঝে এদেরকে নানাভাবে সরানোর চেষ্টা করেও বিফল হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, গত শনিবার এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও আহত হয় ২৫ জন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে মামলা করতে বলা হলেও তারা মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ডাক্তার ও তার পরিবারের সদস্যদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাতে গোপালগঞ্জ পৌর শ্মশানে সম্পন্ন হয়েছে।
এলাকাবাসী মো. টুটুল শেখ, ইবাদত শেখ ও মামুন মুন্সী জানান, পরিবহনগুলোর গতি আর প্রতিযোগিতা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেল চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। এ ছাড়া মহাসড়কের দুই পাশ দখলও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে লিখেছেন, যোগদানের পর গত দেড় মাসে শুধু কাশিয়ানী হাইওয়েতেই ১৮টি মৃত্যুর ঘটনার খবর আমার কাছে আছে। তিনি সবাইকে সুস্থ জীবনের জন্য সড়ক পরিবহনের সব আইন মেনে নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলাচলের জন্য বিনীত অনুরোধ করেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির পাঠান বলেন, মানুষ যদি সচেতন না হয়, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ না করে এবং গাছের গুঁড়ি, খড়কুটো, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে মহাসড়ক নিজের সম্পত্তির মতো ব্যবহার থেকে বিরত না থাকে তাহলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক বলেন, আমরা সব সময় জনগণকে সচেতন করতে মাইকিং করে থাকি, যাতে মহাসড়ক ব্যবহার করে কেউ নিজেদের মতো কাজ না করে। অতিরিক্ত স্পিডে যেসব যানবাহন চলাচল করে তাদেরকে আমরা নিয়মিতভাবে মামলা ও জরিমানা করে থাকি। তাছাড়া হাইওয়েতে যাতে অবৈধ যানবাহন চলাচল না করে সেজন্যও আমরা কাজ করে থাকি।
তারপরও এলাকার লোকজন অবৈধ কাজগুলো করে সড়ককে বিপজ্জনক করে আসছে। আর এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা শনিবারের দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, রাস্তায় অবৈধ যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে গাছের গুঁড়ি ফেলা রাখা, ধান শুকানো বা ধান মাড়াইয়ের মতো কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় বাস-প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জন নিহত হয় আর আহত হয় অন্তত ২৫ জন।
Leave a Reply