সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের মোল্লাদী বাজারে উন্নয়ন সঞ্চয় ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিপিএস, এফডিপিআরসহ বিভিন্ন লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে রাঘদী ইউনিয়নের সহজ- সরল মানুষের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিওর কর্মকর্তারা। আগে মাঝে মধ্যে অফিসে দু’একজনকে পাওয়া গেলেও গত ৭ থেকে ৮ মাস আগে থেকে অফিসে তালা লাগিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ফলে সহায় সম্বল বিক্রি করে জমানো টাকা ফেরতের আশায় অনেকেই এখন স্থানীয় চেয়ারম্যানও মেম্বরসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের এখন একটাই চিন্তা লাভের টাকা না হোক অন্তত জমানো টাকা ফেরত পেলেই তারা খুশি।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ৮ থেকে ৯ বছর আগে মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের মোল্লাদী বাজারে একটি বিল্ডিংয়ে চটকদার সাইন বোর্ড টানিয়ে উন্নয়ন সঞ্চয় ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে সমবায় ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা হয়। বিভিন্নভাবে তাদের লোকেরা জনগণের কাছে গিয়ে লোভনীয় অফার দিয়ে আমানত সংগ্রহ করতে থাকে। একজন দু’জন করে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে তারা প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথম দিকে তারা কারও কারও জমানো টাকার প্রতি লাখে ১৫শ’ টাকা করে লাভ দিলেও পরবর্তীকালে তারা টালবাহানা শুরু করে। কিছু কিছু গ্রাহক টাকার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করলে সংশ্লিষ্টরা অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। ফলে আমানতকারীরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
মুকসুদপুর উপজেলার মোল্লাদী গ্রামের মোস্তফা শেখের ছেলে জাহিদুর রহমান শেখ ছিলেন ‘উন্নয়ন সঞ্চয় ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর মালিক এবং একই এলাকার নান্টু শেখ নামের এক ব্যক্তি ছিলেন অফিসে ম্যানেজারের দায়িত্বে। সহকারী ছিলেন শরিফ শেখ এরাই মূলত মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অধিক লাভের কথা বলে নিজ এলাকার সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা সংগ্রহ করে নেয় বলে ভূক্তভোগি গ্রাহকরা জানায়। এখন মুনাফা নয়, জমাকৃত টাকা ফেরতের আসায় প্রতিদিন অফিসে যোগাযোগ করেও টাকা ফেরত পায়নি গ্রাহকরা।সরেজমিনে গেলে এ বিষয়ে কথা হয় আবুল শেখের সাথে । তিনি জানান, আমার বাবা সাফর শেখ ৬ লক্ষ টাকা ওই এনজিওতে বেশী লাভের আসায় রেখেছে । কিন্তু এনজিওর মালিক জাহিদুর রহমান হঠাৎ করে রাতের আধারে এলাকা থেকে পালিয়ে যায় । এ কথা শোনার পর আমার বাবা টাকার শোকে মারা যায়।
এ বিষয়ে কথা হয় ওই এনজিওর গ্রাহক মোল্লাদী গ্রামের শামিম শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, অধিক লাভের আসায় ৩০ লক্ষ টাকা জমা করেন কিন্তু এক দুই মাস লাখে ১৫শ’ টাকা দেয়ার পর আর কোনো লাভ দেয়নি। আরেকজন গ্রাহক আবু সাঈদ হাওলাদার বলেন, তিনি উন্নয়ন সঞ্চয় ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের একজন গ্রাহক ছিলেন। সেই হিসেবে প্রতিমাসে ১৫শত টাকার লাভের আসায় ৩ লক্ষ টাকা ও আমার ভাই আবু স্যামার ৬ লক্ষ টাকা এফডিপিআর করার পর তাদের এখন আর অফিসে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তার ও তার ভাইয়ের জমানো টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় উক্ত অফিসের সহকারী ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি শুধু কিস্তির টাকা উত্তোলন করতাম । এর বেশী কিছু জানিনা । এমনকি আমার দুই মাসের বেতনের টাকা না দিয়ে চলে গেছে । এখন মালিকের মোবাইল নন্বর বন্ধ রয়েছে । কোন যোগাযোগ করতে পারতেছি না ।
উপজেলার রাঘদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টুটুল জানান, আমার ইউনিয়নের মোল্লাদী গ্রামের শতাধিক লোকের কাছ থেকে লোভনীয় অপার দিয়ে ‘উন্নয়ন সঞ্চয় ঋনদান সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর মালিক জাহিদুর রহমান বহু টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে । এ ব্যাপারে অভিযুক্ত এনজিওর মালিক জাহিদুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি । মুকসুদপুর উপজেলা সমবায় অফিসার সুমনা বিশ্বাস বলেন, এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে ।
Leave a Reply