দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা : মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদে সচিব নেই প্রায় একমাস ধরে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করেই রাজৈরের ইশিবপুরে কাগজপত্রে সই করছেন সদ্য বদলির আদেশ পাওয়া সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার। অথচ, ওই ইউনিয়নে হাজিরা খাতায় সই করছেন আরেক সচিব তাপসী গোলদার। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক বদলির অংশ হিসেবে রাজৈরের ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদারকে বাজিতপুরে বদলি করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মারুফুর রশিদ খান। একই চিঠিতে গত ৮ অক্টোবর সই করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়, ২০ অক্টোবরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে যোগদান করতে হবে। ওই চিঠিতে হোসেনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তাপসী গোলদারকে ইশিবপুরে বদলি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০ অক্টোবরের মধ্যে তাপসী গোলদার ইশিবপুরে যোগদান করেন। অথচ, বাদল চন্দ্র মজুমদার রয়ে গেছেন ইশিবপুরেই। এখনো সই করছেন ইশিবপুরের কাগজপত্রে। এক ইউনিয়নে দুই সচিব থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে বিড়ম্বনা বাড়ছে।এদিকে বাজিতপুরে থাকা সচিব মামুন খন্দকারকে বদলি করা হয় বদরশাপা ইউনিয়নে। এতে সচিবের চেয়ারটি খালি রয়েছে বাজিতপুরে।বুধবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, বাদল চন্দ্র মজুমদার ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের বসেই এখনো কাগজপত্রে সই করছেন। পাশে বসে আছেন সদ্য যোগদানকরা আরেক সচিব তাপসী গোলদার। এতে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সচিবের পদটি গুরুত্বপূর্ণ। একজনের পরিবর্তে অন্যজন সই করলে ভবিষ্যতে চালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে আমাদের। তাই সরকারি কাগজে যার নাম রয়েছে, তিনিই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ মোল্লা বলেন, ‘ইউনিয়নের মানুষের কাজতো হচ্ছেই। কোনো কাজতো আটকে যাচ্ছে না। আমরাও চাই আগের সচিব আমাদের ইউনিয়নেই থাকুক। তিনি লোক অনেক ভালো।’
ইশিবপুর ইউনিয়ন পরিষদে সদ্য যোগদান করা সচিব তাপসী গোলদার বলেন, ‘আমি ইশিবপুরে যাই আর হাজিরা খাতায় সই দেই; কোনো কাগজপত্রে আমাকে সই দিতে দেয় না, বলেও না। আগের সচিবই কাগজপত্রে সই করেন। কেন করেন, সেটা আমি জানি না।’
এ ব্ষিয়ে বাজিতপুরে বদলির আদেশ পাওয়া সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমাকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম স্যার মৌখিকভাবে বলেছেন ইশিবপুরে থাকতে। আমার বাজিতপুরে যেতে কোনো সমস্যা নেই।’
মৌখিত নির্দেশে কাগজপত্রে সই করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার বলেছে তাই করছি।’
বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হালিম ফকির বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে মাঝে মাঝে সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার আসেন। তবে সরকারি নির্দেশ সবারই পালন করা উচিত।’
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা বলেন, ‘বিষয়টিতো আমাকে কেউ আগে বলেনি। একই ইউনিয়নে দুই সচিবতো থাকতে পারে না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই। সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদারকে যেখানে অর্ডার করা হয়েছে তিনি সেখানেই থাকবেন। অন্য ইউনিয়নে তিনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে সেটা আইনগত বৈধ নয়।’ তিনি আরও বলেন, মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিবকে তলব করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জানতে চাইলে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. মারুফুর রশীদ খান বলেন, যে সচিব নির্দেশ অমান্য করেছেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।
Leave a Reply