সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
গাজীপুরে বাবার কবরের পাশে সমাহিত হলেন চিত্রনায়ক ফারুক গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মোটরসাইকেল খাদে পড়ে এক যুবক নিহত On the occasion of auspicious marriage we seek prayers from honorable Prime Minister Sheikh Hasina and everyone from home and abroad. আজ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ২২তম রাষ্ট্রপতি মো:সাহাবুদ্দিনের শ্রদ্ধা নিবেদন দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে আবারও ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে জনগণ-নাছিম। এমপি ফারুক খানের মেয়ে কানতারা খান সহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ২ জন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমানের নিজের ভাষায় তাঁর জীবন কথা
সৈয়দ শামসুল হক মৃত্যুমগ্ন কবিতায় লিখে কোটি মৃত্যু দিয়ে একজন গড়ে তোলে স্বর্গ কি নরকের ঘর

সৈয়দ শামসুল হক মৃত্যুমগ্ন কবিতায় লিখে কোটি মৃত্যু দিয়ে একজন গড়ে তোলে স্বর্গ কি নরকের ঘর

দৈনিক বঙ্গবন্ধু দেশ বার্তা : সৈয়দ শামসুল হক পৃথিবীর সব বন্ধন ত্যাগ করে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পাড়ি জমান অনন্তলোকে। গুপ্ত জীবন প্রকাশ্য মৃত্যুর মতো চেলেঞ্জ ছুঁড়ে দেন স্থবির আবহমানতার পাথর দেওয়ালে আর বলেন—‘আমার যে মৃত্যুতেও মৃত্যু নেই।’শেষভাগের কবিতাগুলোতেও তিনি পরাক্রমশালী মৃত্যুবিরোধী—‘ভুলে যাও সন্ধ্যে বলে কিছু আছে/ একটি তারার ফুল অন্ধকার গাছে/ ভুলে যাও লকেটের মতো চাঁদ/সারারাত সারারাত/ তোমার হাতের দিকে একখানি হাত।’ এভাবেই মৃত্যুমানের ছদ্মবেশের আড়ালে চিরন্তন জীবনের কথা বলেন, বলেন মৃত্যুমানে যতিচিহ্ন নয়, এক অনন্ত ইনফিনিটি। কবি এবং কবিতার মৃত্যুর আপেক্ষিকতা নিয়ে দ্বান্দ্বিকতার ভেতর পাঠককে ঠেলে দিয়েছেন—‘কিন্তু যে কবিতা নামে কলমের মুখে অগ্নিফুল/ শব্দ আর ধ্বনিতে শোনিতে যার সমুদ্রের রোল/ তারও কি বয়স বাড়ে? কবিতারও হয় শাদ চুল? কীর্তনিয়া খোল?’ তবু দিনশেষে ভরা পালে চলে যায় সময়ের নৌকো। বাঁকাজলের বেষ্টনির ভেতর নিঃসঙ্গতা আরও গাঢ় হলে বলতে হয়—‘লাইনে দাঁড়িয়ে আছি—/ নামধাম বিস্তারিত দরখাস্তে আছে।/ পাসপোর্ট চাই।’জীবনকে সর্বোচ্চ সত্যতায় নিয়ে যেতে আজন্ম ধ্বনিমগ্ন সৈয়দ হক শোনান বেঁচে থাকার জয়গান। প্রাণের প্রফুল্লতায় জগতের আনন্দধামে একাকার হয়ে যাপনকে উদযাপনের ইঙ্গিত রাখেন বিপুল রচনাসম্ভারে। মানুষের জয়, মানবতার বিজয়সূচক রেখা চিত্রিত হয় সাহিত্যের আকাশে। মন খারাপের ছুটি দিয়ে দেন নির্জন রেস্তোরায় নিঃসঙ্গ দুপুরে। কিন্তু কী ক্লান্তি আয়ুকে অবসাদে টেনে নেয় মহাকালীন কালো গহ্বরে আর সব স্মৃতিচিহ্ন মুছে দেয় নির্দয় অবাস্তবতার ভেতর। এই দৃশ্য ও পরমদৃশ্যের (বস্তুত অদৃশ্য) ভেতর এক অনিবার্য যুগসূত্র এঁকে দুটোকে করেছেন সমান্তরাল। তাই গুপ্ত জীবন প্রকাশ্য মৃতুর মতো গুপ্ত মৃত্যু ও প্রকাশ্য জীবনও হয়ে ওঠে সমান সহচল।‘কয়েকটি তাস’ কবিতায় ‘উপরে নদীর মতো দীর্ঘ আকাশ’ দেখতে দেখতে তাঁর মনে হয়, ‘জানালায় রঙিন রুমাল নিয়ে’ ছেলেগুলোর তাকিয়ে থাকা নিছক তাকিয়ে থাকা নয় আর শুকনো কপি নিয়ে বেড়ালের খেলা আসলে ক্রীড়াচক্র নয়, অন্যকিছু। তাই তিনি বলেন—‘কিন্তু এই যাকে তুমি মৃত্যু বলো,/ আসলে তা মৃত্যুরই শেষ। জন্মের মুহূর্ত থেকে তারা ছুটে ও-আকাশে,/ দীর্ঘ এক অবিরত দিন’। তখন চঞ্চল হরিণীর ক্ষুর আর যুদ্ধশ্রান্ত অশ্বের হ্রেসা মিলেমিশে বনে ও জনপদে এক আকাঙ্ক্ষিত সত্যের মতো কাব্যবিভাব সৃষ্টি করে। প্রতিটি দিন গুজরান তখন হয়ে ওঠে নিরীক্ষণের এক্স-রে আইস। তখন ফুল থেকে মধু আর ভ্রমরার গুঞ্জরণে কাব্যোদ্যান হেসে উঠলে অন্যপৃষ্ঠায় জীবনের এক পরিপাঠ খেলা করে। তাই অগ্রাহ্যের পরও মৃত্যু এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে চিরায়ত নাছোড়বান্দা। আর এ জন্যই সৈয়দ হক চলে যাওয়াতেও রেখে যান থেকে যাওয়ার বৈভব—‘কিন্তু আমরা সৃষ্টি করি আমাদের মৃত্যুকে/ আর জীবনকে ফেলে রাখি ছুরির মতো বিপজ্জনক বাতাসে।’সময়ের খেলাঘরে একসময় সবকিছু ভেঙেচুড়ে পড়ে। আর বাতাস এসে উড়িয়ে যতসব পথের ধুলো। তখন আকাশ থেকে জমিনে কিংবা বায়ু থেকে মানুষের শ্বাসে শুধু বিচরণ করে কবিতার অনির্বচনীয় সৌন্দর্য। তাই জীবন মধুময়। তবে কাঁটার আঘাত ছাড়া কি পুষ্পের প্রকৃত গন্ধ পাওয়া যায়? তাই কণ্টকিত যাপনকাষ্ঠার ভেতর বরণ করে নিতে হয় জীবনের পরিভাষ্য। আর এ রপ্তকৃত নবভাষার প্রয়োগেই আক্ষরিক অর্থে মানুষ মৃত্যুকে ভুলে থাকে। যেন পালিয়ে বাঁচা, যেন অস্বীকার করে বেঁচে থাকা, যেন মানুষের মৃত্যু নেই! তবু তো মৃত্যু আছে, তাই সৈয়দ হক যখনই মৃত্যুকে আনেন প্রসঙ্গে, তখনই তাকে গভীর রেখায় করে তোলেন দৃশ্যময় এবং দেন সলিল সমাধির এক নতুনতর সংজ্ঞা। তাই কবিতা সংগ্রহের ‘কবিতা ২২৩’ এ তিনি বলেন—‘মৃত্যু শাদা পাখি/ জীবনের তৃণ দিয়ে আকাশকে ভরে।/ আর কোটি কোটি মৃত্যু দিয়ে একজন/ গড়ে তোলে স্বর্গ কি নরকের ঘর।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2020
Desing & Developed BY BBDBARTA